[সাপ্তাহিক বিক্রমপুর সংবাদের পক্ষ থেকে তারুণ্যদীপ্ত বর্ষীয়ান কবি যাকির সাইদের নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাসুদ অর্ণব]
বি. সংবাদ: যাকির ভাই, ইদানিং আপনিতো উপন্যাস লিখছেন। উপন্যাসে পাঠকের সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
যাকির সাইদ: ধন্যবাদ অর্ণব। আমার মাত্র দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমটি “মনা বাউল” দ্বিতীয় উপন্যাস “মানুষ”। মনা বাউল নামটার মধ্যেই এক ধরণের চমক রয়েছে। বাউলদের জীবনী নিয়ে অনেক জীবনী গ্রন্থ আছে। কিন্তু উপন্যাস খুবই কম। উপন্যাসটিতে বাউল দর্শন সূফী দর্শন তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এখানে মনার অন্তরদর্শনকে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করেছি। বইমেলা ২০২৪ পুণ্ড্রপ্রকাশন বইটি প্রকাশ করেছে। ফেব্রুয়ারী ১৮ তারিখে বইটি মেলায় আসে। খুব ভালো বিক্রিও হয়েছে। জানতো পরিচিত লেখক বন্ধু ছাড়া আজকাল খুব কম বইই বিক্রি হয়। “মানুষ” উপন্যাসটি আরো ভালো বিক্রি হয়েছে। আমি দারুণ উৎসাহ পাচ্ছি।
বি. সংবাদ: নতুন কোনো উপন্যাস লিখছেন কি? আমরাতো আগের মতো আপনার কবিতা পাচ্ছি না।
যাকির সাইদ : “টুইস্টিং গার্ল” আমার তৃতীয় উপন্যাস, মার্চে লেখা শেষ করেছি। আগামী বইমেলায় প্রকাশিত হবে আশা করছি। ১৩টি কবিতার বই প্রকাশিত হওয়ার পরে আমার লেখার বাক বদল ঘটেছে। এটা ঘটেছে আমার অন্তর চেতনা থেকেই। কবিতা না লিখলেও কলম থেমে থাকেনি। হয়তো লক্ষ্য করেছ, আত্মতত্ত্ব নিয়ে লেখা ৫টি বই, ৩টি গানের বই, দার্শনিক হোসাইন আহমদ কে নিয়ে লেখা ধর্মীয় দর্শনের ১টি বই, ১টি ছড়ার বই, ১টি গবেষণা গ্রন্থ (মুন্সীগঞ্জের মেয়েলি গীত), ২টি উপন্যাস সহ ১৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এবং আরো ৪টি বইয়ের কাজ চলমান। স্বাভাবিক ভাবেই কবিতা থেকে দীর্ঘ সময় দূরে রয়েছি। তবে নি:স্বন্দেহে আবারও ফিরে আসব কবিতায়।
বি. সংবাদ: আপনার জীবনে নীলা কি এখন বিবর্ণ?
যাকির সাইদ: দেখো সাধু, অন্তরের নীলা কখনো বিবর্ণ হয়ে যায় না। এমনকি মৃত্যুও হয় না। যমদূতের সাধ্য কি অন্তরের ঘরে প্রবেশ করে।
বি. সংবাদ : আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনি পাঠকের সমালোচনা গ্রহণ করতে পারেন না।
যাকির সাইদ: ঠিকই বলেছ, এক সময় পারতাম না কিন্তু এখন পারি। বয়স, এবং পাঠ অভিজ্ঞতার সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করেছি। আসলে এখন সৃষ্টির নেশা আমাকে বুূদ বানিয়ে রাখে, তাই এখন আর সমালোচনায় কান দেই না।
বি. সংবাদ: একজন সৃজনশীল মানুষের কাজই অসুন্দরের বিরুদ্ধে। আপনি কি সব সময় সুন্দরের পক্ষে থাকতে পেরেছেন?
যাকির সাইদ : মানুষ সব সময়ই সুন্দর। যেহেতু মানুষ পশুবৃত্তির শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তাই জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ভুল করে থাকতে পারি। তবে অসুন্দর কিছু করেছি বলে মনে পড়ে না।
বি.সংবাদ: যাকির ভাই, বইসংখ্যা দিয়ে কি একজন লেখককে মাপা যায়?
যাকির সাইদ: বইয়ের সংখ্যা টংখ্যা বাদ দাও। কেউ লিখেন বেশি তার বইও বেশি। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দেড় শতাধিক বই লিখেছেন। তাঁর বাল্যকালের লেখা পড়লেই বুঝবে রবীন্দ্রনাথ কবি হয়েই জন্মেছিলেন। তিনি ছিলেন অন্তরমুখি। যা লিখেছেন অন্তর দিয়েই লিখেছেন। তাঁর হৃদয়টা তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে। হেলাল হাফিজের “যে জলে আগুন জ্বলে” কাব্যগ্রন্থটি ছাড়া বাকি দুটি বইয়ের নামই বা কজন বলতে পারি। বই কম লিখলেও ভাল লেখা হতে পারে, আবার বেশি লিখলেও ভালো লেখা হতে পারে। লেখক আসলে কতটা সৎ তাঁর লেখার প্রতি, তাঁর জীবনের প্রতি। জীবন ও নিষ্ঠা নিয়ে হৃদয়ের কতটা গভীর থেকে মণিমুক্তা তুলে আনতে পেরেছ পাঠকের জন্য।
বি.সংবাদ: যাকির ভাই, দীর্ঘদিন যাবৎ লিখে যাচ্ছেন। লেখালেখির এ জীবনে কী পেলেন?
যাকির সাইদ: দেখো লেখকের জীবনে পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টা না থাকাই ভালো। শোনো, আমি যখন বাসা থেকে বের হই আমার পরিচিত জনেরা আমাকে কবি নামে ডাকে। আমার নামতো কবি না। মজার বিষয় আমার নাম জানা সত্বেও আমাকে কবি নামে ডাকে। একটা জীবনে এর চেয়ে বড় সম্মান আর কি পেতে পারি বলো!
বি. সংবাদ: আপনি কি আপনার লেখালেখি নিয়ে সন্তুষ্ট?
যাকির সাইদ: দেখো একজন লেখক জীবনের নানা ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান তার খুব খুব কম অংশই লেখায় প্রকাশ করতে পারেন। মজাটা হলো তোমার ইন্দ্রিয়ানুভূতির কিছুটা প্রকাশ করতে পারো, কিন্তু ইন্দ্রিয়ানুভূতির বাইরে এক মহাজগতের রহস্য তোমার কাছে ধরা দেয়, তখন ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে তা তুলে ধরতে পারো না। সুতরাং কোনো লেখক তাঁর লেখা নিয়ে সন্তুষ্ট্য না থাকাটাই স্বাভাবিক।
বি. সংবাদ : ধন্যবাদ যাকির ভাই।
যাকির সাইদ: সাপ্তাহিক বিক্রমপুর সংবাদ পরিবারকেও ধন্যবাদ।