নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটিতে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা কর্মীরই ঠাঁই হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। আর এ ঘটনায় দলের ভিতরে নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এবারের গঠিত জেলা আহবায়ক কমিটিতে বেশ কিছু আলোচিত নেতারা বাদ পড়ে গেছেন। আর এ কারণে তাদের নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি ও আলোচনার ঝড় বইছে। এছাড়া কোনো কোনো নেতাকে কৌশলে এ কমিটিতে রাখা হয়নি বলে জোর আলোচনা হচ্ছে। এসব নানা কারণে এখানে বাদ পড়া নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ধানা বাঁধছে। অনেক নেতা কর্মী বিগত সরকারের সময় জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের কাউকে কাউকে এবারের কমিটিতে রাখা হয়নি। বরং আওয়ামী সরকারের সময়ে তাদের সাথে হাত মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে সুবিধা ভোগ করেছেন, তাদের কাউকে কাউকে এ কমিটি রাখা হয়েছে। বিগত দিনে
অনেককে রাজপথের আন্দোলনে দেখা যায়নি বরং আন্দোলনের ভয়ে বিদেশে অবস্থান করেছেন তারা এবার এ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। অনেকে বিএনপি রাজনীতিতে তেমন একটা পরিচিত নন এমন ব্যক্তিও কমিটিতে আসীন হয়েছেন। এসব ঘটনায় এখানের রাজনীতিতে নীরবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পদ বঞ্চিত অনেক নেতা তুষের আগুনে মনে মনে জ্বলছেন আর বলছেন, দলের ভিতরে হাইব্রিডদের প্রভাব বিস্তার ঘটাতে এখানে এমনটি হচ্ছে। তারা এ থেকে মুক্তি কামনা করছেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে যারা এবার এ কমিটিতে ঠাই পায়নি তারা হচ্ছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত শহরের দেওভোগ গ্রামের সিনিয়র নেতা গোলজার হোসেন। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হাইয়ের সময় থেকে এ রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ৩৫বছর ধরে জেলা বিএনপির কমিটিতে যুক্ত ছিলেন। এবার প্রথমবারের মতো তাকে জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। জেলা বিএনপির সাবেক সহ আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শামীম দেওয়ান এবারের আহবায়ক কমিটিতে তার কোন নাম নেই। এ বিষয়ে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিগত সরকারের সময়ের ১৬বছর তিনি নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।
এখানকার পার্শ্ববর্তী গ্রামের আব্দুল আজিম স্বপন। শহরের সর্ব উত্তরের মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী লিটন। মুন্সীগঞ্জ শহর বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে এডভোকেট মাহবুব-উল-আলম স্বপনেরও বিগত দিনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগংগা কলেজের সাবেক ভিপি শাহীন। শহরে ভিপি শাহীন হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বিগত দিনে বিএনপির রাজনীতিতে তার বিশেষ অবদান রয়েছে।
টঙ্গীবাড়ীর দীঘিরপাড়ের শামীম মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক খান মনিরুজ্জামান পল্টন এ কমিটিতে নেই। টঙ্গীবাড়ীতে বিএনপি রাজনীতিতে সিনিয়র নেতাদের সাথে চাপা কোন্দল বিরাজমান থাকায় আলী আজগর রিপন মল্লিক অনুসারীরা এবারের কমিটি থেকে বাদ পড়ার অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া বিগত একটি কমিটিতে আলহাজ্ব আব্দুল হাইয়ের সাথে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিক সদস্য সচিব হিসেবে বিএনপির দুর্দিনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বাদ পড়াটা সবাইকে অবাক করেছে।
সিরাজদিখান উপজেলায় বিএনপির কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা হচ্ছেন বালুচর ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, বাসাইল ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান, বাসাইল ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান টিটু, কেয়াইন ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন মোল্লা, কেয়াইন ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, রাজানগর ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন খোকন, কোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক
আবু তাহের খান, রসুনিয়া ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম, রসুনিয়া ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি কাজী মোস্তাক আহমেদ শ্যামল, ইছাপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী কামরুজ্জামান লিপু, মধ্যপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো: হামিদুল হক, জৈনসার ইউনিয়নের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলী আনসার মোল্লা, বয়রাগাদী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি
মোজাম্মেল হাওলাদার, সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হিমেল মল্লিক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক রাকিব মোল্লা। সিরাজদিখানে অনেক নেতা রয়েছেন যারা জেলা আহবায়ক কমিটিতে থাকার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু তাদের অনেকেরই এবার এ কমিটিতে ঠাঁই হয়নি। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা গেছে, এখানে এমন এক নেতা রয়েছেন যে কিনা স্থানীয় অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বেও এবার জেলা কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এ ঘটনায় এখানে মুখরোচক হয়ে উঠেছেন সেই বির্তকিত নেতা।
গোলজার হোসেন বলেন, দলের ভেতরে হাইব্রিড নেতাদের প্রবেশের কারণে এবার জেলা কমিটি গঠনে এমনটি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভিপি শাহীন বলেন, আমি বিগত সরকারের সময়ে রাজপথে আন্দোলনের কারণে জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অথচ আমাকে এ কমিটিতে রাখা হয়নি। এতে মনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ইছাপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী কামরুজ্জামান লিপু বলেন, সিরাজদিখান উপজেলায় সিনিয়র, ত্যাগী ও আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা কমিটিতে বাদ পড়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে। বিভেদ ও গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে অভিজ্ঞদের অবমূল্যয়ন করা হয়েছে। সিরাজদিখান বিএনপিতে বিএনপি একাধিক ধারায় বিভক্তি রয়েছে, যা দলের জন্য সুখকর নয়।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এবারের আহবায়ক কমিটি গঠনের সময়ে প্রায় ৪০জন নেতার তালিকা প্রনণয় করা হয়। কিন্তু পরে ঢাকা থেকে বেশ কিছু লোক এ কমিটি চলে আসে। এ কারণে এখন এ বিষয়ে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন হাত ছিলো না। যারা যোগ্যতায় বাদ পড়েছেন তাদেরকে আগামী জেলা কমিটি গঠনের সময়ে দলে মূল্যায়ন করা হবে। আহবায়ক কমিটির বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে খুব শীঘ্রই জেলা কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।