শহরে যানজট নিরসনে পৌরসভার উদ্যোগ

মোহাম্মদ সেলিম:
অবশেষে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শহরের যানজট নিরসনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। দেরিতে হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষষে উদ্যোগ গ্রহণ করাকে পৌরবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে। শহরে বেশিরভাগ সময়ে যানজট থাকাতে পৌরবাসী বিক্ষুব্দ ছিল। তবে পৌরবাসী এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে যেসব মিশুক ও অটো রিক্সা বা ইজি বাহক গুলো চলাচল করছে তাদেরকে লাইসেন্সের আওয়াতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে মাইকিং করা হয় শহরময়। তখন সময় বেঁধে দেয়া হয়ে ছিল ২৩ জুন পর্যন্ত। এখন আবারো মাইকিং করা হয় সেই সময় বর্ধিত করে ৩০ জুনের মধ্যে এ সুযোগে সুবিধা নিতে পারবে গাড়ীর মালিকরা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২হাজার ২০০জন গাড়ীর মালিক পৌরসভার নির্ধারিত ফরম ১০০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে পুরণ করে ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ শহরে অবকাঠামো অনুযায়ী এ ধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারে প্রায় ৩হাজারের মতো গাড়ী। কিন্তু শহরে নিত্যদিন যানবাহন চলাচল করছে ১০হাজারের মতো গাড়ী। তবে নারায়নগঞ্জ থেকে নাকি সবচেয়ে এ ধরণের যানবাহন এ শহরে বেশি প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাতেই নাকি সবচেয়ে যানযটের প্রধান কারণ। এটি প্রতিহত করতে মুক্তারপুর সেতু এলাকায় চেক পোস্ট বসানো হতে পারে। এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে এখানে নানা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ শহরের পূর্ব দিক ছাড়া তিন দিকে রয়েছে বর্ডার ইউনিয়নের রাস্তা। সেগুলো হচ্ছে উত্তরে পঞ্চসার, পশ্চিমে মহাকালী আর দক্ষিণে হচ্ছে চরকেওয়ার। এসব ইউনিয়নের সাথে রয়েছে অন্যান্য আরো ইউনিয়ন। সেসব ইউনিয়ন থেকে শহরে প্রতিদিন এ ধরণেরর যানবাহন প্রবেশ করছে কোন বাঁধা ছাড়াই। তাতে শহরের যানজট কয়েক দফা বেড়ে যাচ্ছে বলে এমনটি ধারণা করছেন কেউ কেউ। তবে আসলে কি তাই। বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে বাঁধা হলে কি এ যাত্রা থেকে মুক্তি মিলবে। এ বিষয়ে অনেকেই ভিন্ন মতও প্রষোণ করেছেন। মুক্ত অর্থনীতি কিন্তু এ কথা বলে না। এ নিয়মে কোন কোন ক্ষেত্রে যানবাহন চালকদেও মধ্যে ঝগড়া লাগার আশংকা করছেন কেউ কেউ।
এ শহরে প্রধান যানজট লাগার স্থান গুলো কোথায়। তা আগে চিহ্নিত করতে হবে। তার পরে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত অফিস টাইমে বেশিরভাগ সময়ে নির্ধারিত স্থান গুলোতে যানজট দেখা যায়। অন্য সময়ে সেখানে সেই পরিমাণে যানজট দেখা যায় না। যারা এ ধরণের যানবাহনের চালক তারা কোন ধরণের ট্রাফিক আইন সর্ম্পকে কোন কিছুই যানে। তাদের সেই অজ্ঞতার কারণেও এ শহরে যানজট লাগার মধ্যে একটি কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন। এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে চালক ওভার টেকিং করে যানবাহন চালায়। এ কারণেও শহরে যানজট লাগছে। সুপার মার্কেটের পশ্চিম দিক থেকে যেসব যানবাহন শহরে প্রবেশ করছে আর বাজার থেকে সুপার মার্কোট হয়ে মুক্তারপুর বা পেট্্েরাল পাম্পের দিকে যাওয়ার যানবাহন গুলো কোন ট্রাফিক আইন অনুসরণ করে না। আর তাতেই এখানে যানজট দেখতে পাওয়া যায়। এখানে স্থায়ী বেড়িক্যাড দিয়ে ওয়ান ওয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করলে যানজট থাকার সম্ভাবনা থাকবে না।
সুপার মার্কেট থেকে কাচারী চৌরাস্তা পর্যন্ত অনুরূপ পদ্ধতিতে ওয়ান ওয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করলে এ শহরে যানযট উধাও হয়ে যাবে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা যানবাহন চলাচলে যে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে তাতে শহরে অন্য এলাকার ঐ ধরণের যানবাহন বাঁধার মুখে পড়বে। তাতে এখানকার কোন যানবাহন কোন কারণে অন্য স্থানে গেলে তারাও বাঁধার মুখে পড়তে পারেন বলে আশংকা করা হচ্ছে। আর তখনই তাদের সাথে ঝগড়া লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।
শহরের বাজারের মসলা ভাঙ্গানোর দোকান থেকে কাচারী চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তা দখল করে দুই পাশে ভ্যানগাড়ী দোকান করা হচ্ছে। এখানকার ফলপট্টি এলাকাতে তাদের দোকানের সামনের রাস্তা দখল করে ফল বেচা কিনা হচ্ছে। এর ফলে এখানে যানজট লাগার অন্যতম কারণ বলে সবাই মনে করছেন। অথচ এখানে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটি সরিয়ে নেয়া হলে এখানকার যানজট না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ যানবাহনকে কেন্দ্র করে শহরে শতাধিক গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। শহরে যানবাহন সীমিত করা হলে ঐসব গ্যারেজের মালিকরা আর্থিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত সাত বা আট বছর আগে শহরে যানবাহন মুক্ত করার লক্ষ্যে গাড়ীতে হলুদ রং লাগানো হয়। তখন প্রতিটি গাড়ীর মালিকদে কাছ থেকে ১হাজার ৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়। সেইসব গাড়ীতে আবার নাম্বারও দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোন তথ্য মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাতে নেই।
একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীবাড়ী থেকে প্রায় আড়াই হাজারের মতো এ ধরণের যানবাহন শহরে প্রবেশ করে সারাদিন তারা যাত্রী আনা নেয়ার ব্যবসা করে থাকে। এ কারণে শহরে বেশিরভাগ সময়ে এ ধরণে যানবাহন ভরপুর দেখা যায় বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ কারণে শহরে যানজট লাগার একটি কারণ হিসেবে চিহ্নি করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা অটো মিশুক ও সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য আমরা ৫০ টাকার একটি ফরম মালিকদের মাঝে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬শতাধিক সদস্য আমরা পেয়েছি। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শহরের যানজট নিরসনের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা পজেটিভ।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী অফিসার সিকদার মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, এখানে মিশুকের গাড়ী থেকে বার্ষিক ১হাজার ৮০০ টাকা ও ইজিবাইক গাড়ী থেকে ৩হাজার ৫০০টাকা নেয়া হবে।.তাদেরকে ডিজিটাল লাইসেন্স দেয়া হবে।
পৌরসভার সীমান্ত এলাকার যেসব ইউনিয়ন রয়েছে তাদেরকে এ লাইসেন্স দেয়া হবে সীমিত আকারে। যাতে তারা শহরে যানবাহন নিয়ে আসতে ও যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে তাদের সীমানায় পৌরসভার যানবাহন প্রবেশ করলেও কোন ঝগড়া লাগার সম্ভাবনা নেই। তবে দূরের ইউনিয়ন গুলো এ সুযোগ পাবে না।
এ লাইসেন্স প্রদানের পরে শহরের গুরুত্ব পূর্ণ ৫টি স্থানে দুই শিফটে ১০জনের মতো এ কাজের জন্য লোক নিয়োগ করা হবে। তাদেরকে প্রতিমাসে মোটা দাগের বেতন দেয়া হবে যানজট থেকে শহরকে মুক্ত রাখার জন্য। লাইসেন্স প্রাপ্তীর টাকা এ খাতে খরচ করা হবে। এতে কিছু লোকের কর্মস্থান হবে। আর অন্যান্য স্থানে মাঝে মধ্যে জটিকা পরিদর্শন করা হবে শহরের যানজট মুক্ত ঠিক রাখার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *